Posts

আরশিযুগল প্রেম (পর্ব-১৯)

 # আরশিযুগল প্রেম❤ # লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা ❤ # পর্ব- ১৯ "মুরং" জাতির বাস মূলত বোর্ডিং পাড়াতে হলেও শেরকর পাড়াতেও তাদের অস্তিত্ব চোখে পড়ার মতো। মুরংরা অন্যান্য পাহাড়ী আদিবাসী থেকে খানিকটা ভিন্ন এবং বন্য। এ যুগে এসেও তাদের অধিকাংশই "বাংলা" ভাষা বুঝে না। শুধু বাংলা নয় অন্যকোনো আদিবাসীদের ভাষাও তারা বুঝে না। এমন এক বন্য জাতির সন্তান হয়েও মেমপ্রে কিভাবে স্পষ্ট বাংলায় কথা বলে তা শুভ্রতার কাছে আস্ত এক রহস্য। মেমপ্রেদের টঙ বাড়ির বারান্দার এক কোণে বাঁশের চাটাই-এ ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রতা। রক্তিম সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। কিছুক্ষণের মাঝেই পাহাড়ের আড়ালে লুকিয়ে পড়ার আমোদ যেন তার পুরো শরীর জুড়ে। শেষ বিকেলের সূর্যের মতোই আমোদিত শেরকর পাড়ার চারপাশ। পাড়ায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়েই ঘুমের রাজ্যে হারিয়েছিলো শুভ্রতা। তাই এই শেষ বিকালে ঘুম ভেঙে পাড়াজুড়ে উৎসবের আমেজ দেখে বেশ খানিকটা অবাকই হলো সে। ছবির মতো এই পাহাড়ি পাড়ায় বিশাল এক মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সেই মঞ্চ সাজানো হয়েছে বাঁশের ছিলকা দিয়ে তৈরি রং-বেরঙের ফুল দিয়ে। মঞ্চের ঠিক নিচে বাঁশ দিয়ে একটা ঘের তৈরি করা হয়েছে। আর সেই ঘেরের মাঝ...

আরশিযুগল প্রেম (পর্ব- ১৮)

 # আরশিযুগল প্রেম❤ # লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা ❤ # পর্ব- ১৮ পাহাড়ী জীবন যেমন অদ্ভুত ঠিক তেমনি অদ্ভুত পাহাড়ী রীতি। "এই মেঘ এই বৃষ্টি" বাক্যটা যেন বিশেষ করে পাহাড়ী জনপদের জন্যই সৃষ্টি। ঋতু হিসেবে বসন্ত কাল হলেও রাত থেকেই চলছে তুমুল বর্ষন। সকাল দিকে আকাশ পরিষ্কার দেখে শেরকর পাড়ার পথে হাঁটা দিয়েছিলো সাদাফ-শুভ্রতা কিন্তু যাত্রাপথের দু'ঘন্টার মাথায় আবারও শুরু হলো বৃষ্টি। চারদিক অন্ধকার করা বৃষ্টি। দুই ঘন্টা একটানা হেঁটে অনেকটাই হাঁপিয়ে উঠেছিলো শুভ্রতা। আঁকাবাঁকা বন্ধুর পথ পেরিয়ে মাত্রই জঙ্গলা মতোন জায়গায় পৌঁছেছিলো তারা। এর মধ্যেই বৃষ্টিকন্যা পরম আমোদে মেতে উঠলো গাছের সবুজ পাতায় আর নির্বাক গাছগুলোর ডালপালায়। মেমপ্রে পাহাড়ী যুবক হওয়ায় জায়গাটার খুঁটিনাটি সমস্তই যেন নখদর্পনে তার। তাছাড়া একাধিকবার আসার ফলে সাদাফের কাছেও অতি পরিচিত হয়ে উঠেছে এই পথঘাট। তাই বৃষ্টি শুরু হওয়ার সাথে সাথেই পাঁচ/দশ মিনিটের মাথায় একটা গুহা মতোন জায়গা খুঁজ করে এই অযাচিত বৃষ্টি বিলাস থেকে রক্ষা পেলো তারা। কিন্তু ততক্ষণে শরীরের অধিকাংশই ভিজে টুইটুম্বুর। সাদাফ-মেমপ্রে যখন ভেজা চুল আর শার্ট ঝাড়তে ব্যস্ত ঠিক তখনই...

আরশিযুগল প্রেম (পর্ব-১৭)

 # আরশিযুগল প্রেম❤ # লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা ❤ # পর্ব- ১৭ পাহাড়ী বনু বাতাসে উম্মাদের মতো উড়ে চলেছে শুভ্রতার চুল। শুভ্রতা বাসের জানালার দিকে খানিকটা ঝুঁকে এসে তাকিয়ে আছে বাইরে। অসংখ্য  পাহাড়, গাছ-পালা, আঁকাবাঁকা রাস্তা আর এই মনোমুগ্ধকর বাতাসে রীতিমতো পাগল হয়ে যাচ্ছে সে। মনে হচ্ছে, সব কিছুকে আটকে রেখে যদি প্রতিটি জিনিসকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে পেতো। সবই যে দেখার আগেই দৌড়ে পালাচ্ছে। কোনটা রেখে কোনটা দেখবে শুভ্রতা? ছোট্ট বেলা থেকেই ভয়ঙ্কর সব জঙ্গল, পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর শখ তার। যেখানে প্রকৃতির রেখা হবে স্বচ্ছ, সুনিপুণ। চারদিকে থাকবে বন্য সবুজ। কিন্তু ব্যস্ত পরিবারের চাপে কখনোই পাহাড়ে আসা হয় নি তার। পূরণ হয় নি সেই সুপ্ত ইচ্ছেটাও। শুভ্রতা দু'চোখ বুজে গাঢ় শ্বাস টেনে নিলো। সাথে সাথেই নাকে গিয়ে লাগলো তীক্ষ্ণ মিষ্টি গন্ধ। শুভ্রতা চোখ মেলে আবারও সারি সারি পাহাড়ের উপর চোখ রাখলো। তবে কি এটা পাহাড়ের গন্ধ? সাদাফ পাশের সিটে বসে শুভ্রতার বাচ্চামোগুলো দেখছিলো। এই সামান্য পাহাড়গুলো দেখেই মেয়েটা এতোটা পাগল হচ্ছে তাহলে পাহাড়ের গহীনে গেলে কি হবে তার? শুভ্রতার মাঝে "অল্প" শব্দটির যে প্রভাব আছে ...

আরশিযুগল প্রেম (পর্ব-১৬)

 # আরশিযুগল প্রেম❤ # লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা ❤ # পর্ব- ১৬ আলুথালু শরীরে কাঁথা পেঁচিয়ে এক হাতে কপাল চেপে বসে আছে শেফা। মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে তার। কাল রাতে ঘুম না হওয়ার জন্যই হয়তো এই মাথা ব্যাথার শুরু। শেফা ঘাড় ফিরিয়ে পাশে তাকালো। বালিশে মুখ গুঁজে উল্টো হয়ে শুয়ে আছে আরাফ। কাঁথার বেশির ভাগই পড়ে আছে তার পেটের নিচের দিকটাই। যার ফলে, বাকি শরীরটুকুই উদোম। শেফা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে আরাফের ওপর কাঁথাটা মেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। হোটেলের ব্যালকণিতে লাগানো কাঁচের দরজা ভেদ করে অল্পবিস্তর আলো এসে পড়ছে মেঝেতে। ঘাড়ে পড়ে থাকা চুলগুলো ঝুঁটি করতে করতে ব্যালকণির দরজাটা ঠেলে দিতেই হালকা ঝিরিঝিরি পাহাড়ী বাতাসে উম্মাদ হয়ে উঠলো শেফার মন। সকালের সূর্যটা মাত্রই পাহাড়ের গা ঘেঁষে জেগে উঠছে। নিস্তব্ধ এই পাহাড়ী শহরটা যেন পাখির কিচিরমিচিরে হয়ে উঠেছে তারুণ্যে মত্ত। শেফা ব্যালকণির রেলিঙে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো। ঠোঁটের কোণে বিস্ময়াবিষ্ট মিষ্টি হাসি ফুটলো তার। এই পঁচিশ বছরের জীবনে এতোটা সুন্দর সকাল তো কখনো দেখা হয় নি তার। ছবির মতো ঝকঝকে গাঢ় সবুজ পাহাড়। দূরের রক্তিম আকাশে ছোট ছোট পাখির উড়ে চলা। ঝিরিঝিরি বাতাস! হঠাৎ করেই অচিন্...

আরশিযুগল প্রেম (পর্ব-১৫)

 # আরশিযুগল প্রেম❤ # লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা ❤ # পর্ব- ১৫ চারপাশে হালকা ঝিরিঝিরি পাহাড়ী বাতাস। ব্যালকণির কোণে একটি জায়গায় ঝুলন্ত গামছাটা দোলে উঠছে মাঝে মাঝেই। যেদিকে দু'চোখ যাচ্ছে সেদিকেই অন্ধকারে ঘেরা পাহাড়। রাতের অন্ধকারে পাহাড়গুলো যেন অচিনপুরের ভয়ঙ্কর কোনো দৈত্য। হোটেলের সামনের খোলা জায়গায় খেলছে সাদা পানির ফোয়ারা। তার চারপাশে লাল,হলুদ,নীল রঙের গোল গোল আলো। আকাশের এক কোণে থালার মতো মস্ত এক চাঁদ। সেই চাঁদকে ঘিরেই মেঘের হাজারও লুকোচুরি। সেই লুকোচুরিতে চোখ রেখেই আকাশ পাতাল ভাবছে শুভ্রতা। জ্ঞান হারানোর আগে সাদাফের আদুরে গলায় বলা "শুভ্রা" নামটা এখনও যেন কানে বাজছে তার। আর প্রতিবারই লজ্জায় রক্তিম হচ্ছে সে। আবার, কখনো কখনো অস্বস্তিতে আড়ষ্ট হয়ে আসছে তার শরীর। আচ্ছা? জ্ঞান হারানোর পর কি হয়েছিলো তারসাথে? সাদাফ কি বিরক্ত হয়েছিলো তার ওপর? হওয়ারই কথা...এমন অযাচিত ঝামেলায় কেই বা জড়াতে চায়? শুভ্রতাকে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে হোটেলের গ্রাউন্ডে বাগানের দিকে তাকালো। রঙিন আলোয় বাগানের গোলাপগুলোকে কেমন অদ্ভুত লাগছে। কিন্তু শুভ্রতার মনে গোলাপের অদ্ভুত এই রূপটা তেমন প্রভাব ফেলছে না। তার মনে চলছ...

আরশিযুগল প্রেম (পর্ব-১৪)

 # আরশিযুগল প্রেম❤ # লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা ❤ # পর্ব- ১৪ বাস ছুটে চলেছে তার গন্তব্যে। রাতের অন্ধকার আর সা সা বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে কি দূরন্ত গতি তার। বাসের ভেতরের আলো নেভানো। সবাই যেন ঘুমের রাজ্যের ব্যস্ত পথিক। কিন্তু শুভ্রতার চোখে ঘুম নেই। শরীরটা হঠাৎই ভীষণ খারাপ লাগছে তার। মাথা ঘুরছে, গা গুলাচ্ছে সেই সাথে কেমন অস্থিরতা ভরা ঘাম হচ্ছে। নিজেকে খুব বেশি অসহায় মনে হচ্ছে। শরীরের বলটাও যেন ধীরে ধীরে কমে আসছে তার। এখন কি করবে সে? সাদাফকে বলবে? সে কি বিরক্ত হবে? শুভ্রতার হঠাৎ করেই কান্না পাচ্ছে। মাকে ভীষণ মনে পড়ছে। মা পাশে থাকলে এতোটা অসহায়ত্ব কখনোই ভর করতো না তাকে। কিছু বলার আগেই সবটা বুঝে নিয়ে তাকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়তেন মা। অযথা হা-হুতাশ করতেন। শুভ্রতার বদলে নিজেই কান্না কান্না ভাব নিয়ে মুখ ফুলাতেন। শুভ্রতার সব অসহায়ত্ব নিজের কাছে টেনে নিয়ে নিজেই অসহায় মুখ করে বসে থাকতেন। শুভ্রতার একটু আর্ত চিৎকারেও চমকে উঠতেন। মেয়ের থেকে বিরক্তিমাখা তিরস্কার পেয়েও আদরমাখা চুমু আঁকতেন। শুভ্রতা অযাচিত  অসুস্থতায় ক্লান্ত হয়ে সিটে গা এলিয়ে দিলো। সাদাফের তখন তন্দ্রাভাব হচ্ছিলো মাত্র। অজানা কারণ...

আরশিযুগল প্রেম (পর্ব- ১৩)

 # আরশিযুগল প্রেম❤ # লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা ❤ # পর্ব- ১৩ ---" দেখ, একদম পেঁচিয়ে কথা বলবি না। যা বলার ডিরেক্ট বল। কি চাই?"  ---" তোকে।"  আরাফের কথায় চোখ বড় বড় করে তাকালো সাদাফ। সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ---" কিহ? বিয়ে করার পর তোর মধ্যে গে টাইপ বৈশিষ্ট্য দেখা দিচ্ছে দেখছি।"   আরাফ তাড়াহুড়ো করে বললো, ---" আরে ধেৎ!  ওসব কিছু নয়। তোর একটা হেল্পের প্রয়োজন, দোস্ত। মানা করিস না প্লিজ।"  সাদাফ এবার সোফায় গা এলিয়ে আরাম করে বসলো। নিচের ঠোঁট কামড়ে টিভির চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে বললো, ---" তোদের কি আমাকে হেল্পলাইন মনে হয়? যখন তখন হেল্প চাস। "  আরাফ সোফায় একপা তুলে সাদাফের দিকে ঘুরে বসলো। আবেগী গলায় বললো,  ---" এমন করিস কেন? তুই ছাড়া আর আমার কে আছে বল?"  সাদাফ টিভি থেকে চোখ সরিয়ে আরাফের দিকে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে বললো, ---" হইছে। আর সেন্টি খাইও না। কি হেল্প তাই বল।"  আরাফ এবার নড়েচড়ে বসলো। গলা খাঁকারি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে ভয়ে ভয়ে বললো, ---" পরশু শেফার ভার্সিটি থেকে ট্যুরে যাচ্ছে। তিন দিনের জন্য।" সাদাফ কপাল ...